আশরাফুলের উপলব্ধি, আর জাতীয় দলে ফেরা সম্ভব না !!

মোহাম্মদ আশরাফুল ৭ জুলাই ১৯৮৪ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জন্মগ্রহণকারী বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক ব্যাটসম্যান এবং অধিনায়ক।মোহাম্মদ আশরাফুল একজন ডানহাতি ব্যাটসম্যান এবং মাঝে মাঝে ডানহাতে লেগ স্পিন বল করে থাকেন।

ঢাকার ঘরোয়া ক্রিকেটে আলো ছড়ানো অনেক তারকা ক্রিকেটার এ অমরজ্যোতি ক্লাবে এসে অনুশীলন করতেন। সেই অনুশীলনে এই অনেকের ভিড়ে ছিলেন মোহাম্মদ আশরাফুলও । নেটে মাঝেসাজে বোলিং করার সুযোগও মিলতো তার। নয় বছর বয়সী সেই শুকনো আশরাফুলের ইচ্ছা ছিল শেন ওয়ার্নারের মতো লেগ স্পিনার হওয়ার। খালেদ মাহমুদ সুজন তাকে সুযোগটা দিলেন। ব্যাট হাতে ব্যাটিং স্ট্যান্স নিলেন ইমরান হামিদ পার্থ। ঢাকার ঘরোয়া ক্রিকেটে পার্থ তখন মারকুটো ওপেনার হিসেবে পরিচিত। নেটে আশরাফুলের প্রথম বলেই, দারুণ টার্ন এবং বাউন্সে বোকা বনেন পার্থ। সেই থেকে আশরাফুলের শুরু। কিন্তু পরবর্তীতে লেগ স্পিনার আশরাফুলের পরিচয় বদলে যায়।

পুরোপুরি ব্যাটসম্যান হয়ে ওঠেন তিনি। কোচ ওয়াহিদুল গনির নিপুণ পরিচর্যায় আশরাফুল ক্রিকেটেভালো পারফরম্যান্স দেখিয়ে জাতীয় দলে নাম লেখান মাত্র ১৭ বছর বয়সে। অভিষেক টেস্টেই সেঞ্চুরি পান। আশরাফুলের ওয়ানডে অভিষেক হয় জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে, ২০০১ সালের ১১ই এপ্রিল । ম্যাচটিতে তিনি মাত্র ৯ রান করেন, বাংলাদেশ হারে ৩৬ রানে। ২০০৫ সালের ১৮ জুন তারিখে ইংল্যান্ডের কার্ডিফে ন্যাটওয়েস্ট সিরিজে তৎকালীন বিশ্বের একনম্বর ক্রিকেট পরাশক্তি অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের স্মরণীয় জয়ে আশরাফুল ১০০ রান করেন। রিকি পন্টিংয়ের নেতৃত্বে হেইডেন, গিলক্রিস্ট, ম্যাকগ্রা, ব্রেট লি আর গিলেস্পিদের নিয়ে গড়া সেই অস্ট্রেলিয়া দলটিকে ক্রিকেট ইতিহাসেরই অন্যতম সফল দল বলা হয়।তারকাখচিত ব্যাটিং লাইনআপ নিয়েও সেদিন বাংলাদেশর বিপক্ষে ২৫০ এর বেশি রান করতে পারেনি অস্ট্রেলিয়া। জবাবে শুরুটা একেবারেই জয়সুলভ ছিল না বাংলাদেশের যদিও।

কিন্তু অধিনায়ক হাবিবুল বাশারের সাথে ১৩০ রানের জুটি গড়ে দলকে জয়ের দারপ্রান্তে পৌছে দেন আশরাফুল। তার ১০১ বলে ১০০ রানের মহাকাব্যিক ইনিংসে ভর করেই অজিদের হারিয়ে দেয় টাইগাররা। আজও ক্রিকেটপ্রেমীদের চোখে ভেসে অ্যাশের সেই অনবদ্য ইনিংসটি। ২০০৭ বিশ্বকাপ ক্রিকেটে তৎকালীন একনম্বর ক্রিকেট দল দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে আশরাফুল ৮৩ বলে ৮৭ রান করেন, যা বাংলাদেশকে আরেকটি স্মরণীয় বিজয় উপহার দেয়। এতে তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচ পুরস্কারে ভূষিত হন। ২০০৭ সালে জিতেছিলেন গ্রামীণফোন-প্রথম আলো বর্ষসেরা খেলোয়ারের পুরষ্কার। আশরাফুল বিশ্বের কনিষ্ঠতম খেলোয়াড় হিসেবে টেস্ট শতক করার রেকর্ডের অধিকারী।

নিজের ১৭তম জন্মদিনের একদিন পূর্বে ২০০১ সালের ৮ সেপ্টেম্বরে সিংহলিজ স্পোর্টস ক্লাব গ্রাউন্ডে অনুষ্ঠিত এশিয়ান টেস্ট চ্যাম্পিয়নশীপে তিনি তার অভিষেক টেস্টে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ১১৪ রান করে এই কৃতিত্ব অর্জন করেন। যা তাকে বিশ্বের কনিষ্ঠতম খেলোয়াড় হিসাবে টেস্ট শতক করার রেকর্ডার অধিকারী করে তুলে। ২০০৬ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তিনি ১৩৬ রান করেন। টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে তার অভিষেক হয় ২০০৭ এ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। তিনিই প্রথম বাংলাদেশী ব্যাটসম্যান হিসেবে টেস্টে ৪টি সেঞ্চুরি করার গৌরব অর্জন করেন। ২০০৭ ও ২০০৯ এর মধ্যে তিনি ১৩টি টেস্ট এবং ৩৮টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলেন। যার মধ্যে আটটিতে জয় পায় বাংলাদেশ।

ঢাকা গ্লাডিয়েটরসের হয়ে খেলা আশরাফুলের বিরুদ্ধে ২০১৩ সালে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগে (বিপিএলে) ম্যাচ পাতানোর সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠে। আকসুর তথ্য ও আশরাফুলের সহজ স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে ২০১৩ সালের আগস্ট মাস থেকেই তাকে সবধরণের ক্রিকেট থেকে তাকে সাময়িকভাবে নির্বাসিত করে বিসিবি। ২০১৪ এর জুলাই মাসে বিসিবির দুর্নীতি দমন ট্রাইব্যুনাল তার উপর ১০ লাখ টাকা জরিমানা সহ ৮ বছরের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পরে অবশ্য আশরাফুলের আবেদনের ভিত্তিতে সাজা কমিয়ে ৫ বছর করা হয়।

নিষেধাজ্ঞা উঠে যাবার পর ২০১৬ সালের ১৪ আগস্ট থেকে ঘরোয়া ক্রিকেট খেলার অনুমতি পান তিনি ।২০১৮ সালের ১৩ আগস্ট তার ওপর থেকে ওঠে যায় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খেলার নিষেধাজ্ঞাও। কিন্তু ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে আশরাফুলের উপলব্ধি, এখন আর জাতীয় দলে ফেরা সম্ভব না তার পক্ষে।

 

Author : Raushan Ara Farhana

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *