চাঁদপুরের তাজা ইলিশের ব্র্যান্ড বানানোর লক্ষ্যে ঢাবির সিয়াম

ঢাবিতে পড়ে ইলিশ মাছ নিয়ে কাজ করবে শুনে পরিবারসহ অনেকেই অনেক কথা বললেও নিজেই নিজের সাপোর্টার হয়ে কাজ শুরু করে দেন আহামেদউল্যাহ সিয়াম।তার হোম ডিস্ট্রিক্ট ইলিশের আবাসস্থল চাঁদপুরে। মানুষ এর কাছে চাঁদপুরের সেই ইলিশের স্বাদ অটুট রাখতে তার এই উদ্যোগ।

উদ্যোক্তা হলে যে এত মানুষের ভালোবাসা,সাপোর্ট পাওয়া যায় তা জানতেন না তিনি। থেমে গেলে তিনি কখনো ই নিজের একটা পরিচয় পেতেন না। এখন তাকে মানুষ ‘ইলিশের বাড়ি’র সিয়াম নামেই চেনেন। তার পেইজ এর নাম ইলিশের বাড়ি’ (চাঁদপুরের তাজা ইলিশের নিশ্চয়তায়)।
এই উদ্যোগ এ নতুন মাত্রা যোগ হয় এবছর ঈদে। কুরবানীতে অল্প করে হলেও শামিল হন বাবার সাথে।ছোটবোনদের দিতে পারেন ঈদ সালামি।

কোয়ারিন্টাইন এর মাঝেই গ্রাজুয়েশন শেষ হয়ে গিয়েছিল, সেহেতু চাকরির জন্য রাতে ঘুম হতো না ।ভাবতেন কি করা যায়!ভাবতে ভাবতে ১১-১২ টা প্ল্যান রেডি করে প্রতিদিন এগিয়ে যাওয়ার প্লান করতেন। তারপর ‘WE (Women and e-commerce forum)’ নামক গ্রুপে ফ্রেন্ডের মাধ্যমে এড হয়ে গ্রুপটা পর্যবেক্ষণ করে মানুষের বিজনেসের বিভিন্ন লেসন শুনে ইতিবাচক প্রেষনা সঞ্চয় করেন। ক্যাম্পাস এর হলে ইলিশের মত দেখতে কি খেতেন কোনো স্বাদ পেতেন না।সবমিলিয়ে ভাবলেন ইলিশ নিয়ে কাজ করা যায় কিনা এবং এখানে ‘WE’ এর একটা বড় অবদান আছে।

তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক সংগঠন এ যুক্ত ছিলেন। ‘বাঁধন’ এ থাকায় তার নাম হয়ে গেছে রক্তচোষা।বিএনসিসি করায় সবাই সার্জেন্ট, মেজর বলে ডাকেন।

কাজ শুরুর দিকে তার বাবা শামছুদ্দিন পাটওয়ারী( চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলার উত্তর-পূর্ব রাজারগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক) প্রথমে সন্তুষ্ট ছিলেন না,তিনি চান নি ঢাবিতে পড়ে ছেলে মাছ বিক্রেতা হবে। ইলিশ মাছ নিয়ে কাজ করতে গিয়ে দুই দিনে মাত্র সাত ঘন্টা ঘুমিয়েছিলেন বলে তার বাবা চিন্তিত হয়ে বলেন, ” এসব নিয়ে থাকলে তো না ঘুমাইয়া তুই পাগল হইয়া যাইবি৷ বাদ দে এসব।”

প্রথম অর্ডারটা পাওয়ার পর সবচেয়ে বেশি সাপোর্ট পরিবারের এই সদস্যদের কাছেই পেয়েছেন।বড়বোন আর আরেক ছোট মিলে রাত জেগে চিরকুট লিখে দিয়েছে, মূলধনে শর্ট পড়ায় বাবা আড়াই হাজার টাকা দিয়েছেন, সময়ে অসময়ে একটু পর পরই বিভিন্ন অংক দেখে দিয়েছেন৷ সকালের নাস্তা করা ছাড়াই ছোটভাই তার সাথে মাছ সংগ্রহ করতে গিয়েছেন।মোট কথা পরিবারের সবাই ছিলেন তার পাশে

জুন মাসের মাঝামাঝি সময়ে তিনি ফেসবুকে এ ‘ইলিশের বাড়ি’ নামে একটি পেইজ খোলেন ।
এলাকার ইলিশ ব্যবসায়ীদের সাথে যোগাযোগ করে ভালো ইলিশ এর সোর্স খুঁজে বের করেন তিনি। কীভাবে কুরিয়ারের মাধ্যমে ঢাকা বা অন্যান্য এলাকায় ইলিশ পাঠানো যাবে তাও খোঁজখবর নিয়ে কাজে লেগে যান।

আর এরই মধ্যে প্রায় ২০০ কেজি মাছ বিক্রি করেছেন সেই পেইজ থেকে।
চাঁদপুরের ইলিশের দাম সবচেয়ে বেশি হওয়ায় তেমন লাভ না হলেও তাকে চিনতে শুরু করে অনেকেই৷ উইয়ের পার্সোনাল ব্র্যান্ডিংয়ের জ্ঞান কাজে লাগিয়ে নিজের পরিচিতি আরো বাড়াতে থাকেন।
দেশের এবং প্রবাসের অনেকেই তার উদ্যোগকে স্বাগত জানায় ও পরিবারের জন্য তাজা ইলিশ অর্ডার করেন আর তিনি চেষ্টা করছেন সবচেয়ে ভালো ইলিশটাই দিতে। চাঁদপুরের তাজা ইলিশ পেয়ে তাদের হাঁসির প্রশস্ততা বেড়ে গিয়েছে

কয়েকজন রিপিট কাস্টমারও পেয়েছেন, কাস্টমার খাতিরের জ্ঞান কাজে লাগিয়েই৷ এর মাঝে একজন ফোন দিয়ে তার ভারতীয় বসের জন্য এখন থেকে প্রতি সপ্তাহে তাজা ইলিশ পাঠাতে বলেন।এছাড়াও ঢাকা,চট্টগ্রাম,সিলেট,লালমনিরহাটসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অনেকেই অর্ডার করে ঘরে বসেই পেয়েছেন চাঁদপুরের তাজা ইলিশের স্বাদ। সারাদেশে তার হাত ধরেই চাঁদপুরের তাজা ইলিশ পৌঁছে যাচ্ছে।

এছাড়া সম্প্রতি বড় একটা এক্সপোর্ট কোম্পানির কাছ থেকে ৫০ কেজি চাঁদপুরের ইলিশের অর্ডারও পেয়েছেন।এই কোম্পানি নিজেদের ফ্যাক্টরিতে প্রসেসিংকৃত কুকড ইলিশ বিদেশের আনাচে কানাচে পৌঁছে দিতে চায়।

তিনি ভবিষ্যতে তার ’ইলিশের বাড়ি’ কে চাঁদপুরের তাজা ইলিশের দেশীয় ব্র‍্যান্ড  হিসেবে দেখতে চান।আরো চান মানুষের মুখে যতদিন ইলিশের নাম থাকবে ততদিন যেন ‘ইলিশের বাড়ি’র নামও থাকে।

তিনি চান দেশের প্রতিটা জেলার মানুষ চাঁদপুরের তাজা ইলিশটা পাবে।চাঁদপুরের ইলিশের ঘ্রাণ নিয়ে কোনো প্রতারনা হবেনা কারো সাথে, এমনকি বিদেশেও পৌঁছে যাবে।ব্র‍্যান্ড হওয়ার পর ও ইলিশের কোয়ালিটি এবং মানুষের বিশ্বাস ধরে রাখার প্রতিশ্রুতি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি।

যদি কোন কিছু নিয়ে কাজ শুরু করতে যাচ্ছেন বা করবেন এমন হয় তাহলে নিচের বিষয়গুলো দেখতে পারেন। পরামর্শ দিয়েছেন উদ্যোক্তা সিয়াম।

★শুরুতে নিজেই নিজের সাপোর্টার হতে হবে। কারণ, প্রথমে হয়তো পরিবারকেও সাথে পাবেন না।

★শুরু করাটা গুরুত্বপূর্ণ কেননা সিড়ির প্রথম ধাপে পা না রাখলে উপরে উঠা যায় না।

★কারো অর্ডার নেওয়ার সময় অবশ্যই কিছু টাকা অগ্রীম নিয়ে নেবেন।

★ কাজ করতে গিয়ে আমার মতো ধরা খেলে ছোটবেলায় হাঁটা শিখতে গিয়ে হোঁচট খেয়ে পড়ার পর আবার উঠে দাড়ানোর মুহূর্তটাকে মনে করে কাজ চালিয়ে যেতে হবে।

ঘরে বসে চাঁদপুরের তাজা ইলিশ পেতে যোগাযোগ করুন:

Facebook Page: Click Here
Facebook profile: Click Here

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *