ডিপ্রেশন : প্রাণঘাতী অস্ত্র

ডিপ্রেশন!!!

ইদানীং সোশ্যাল মিডিয়ায় বহুল প্রচলিত একটি শব্দ।বিশেষ করে প্রতিবার কারো আত্মহত্যার পরপরই এই শব্দটি প্রচুর দেখতে পাওয়া যায় সোশ্যাল মিডিয়াতে।

প্রথমেই কিছু ব্যাপার ব্যাখ্যা করা দরকার।আজকাল প্রায়ই দেখা যায় কিছু হওয়ার আগেই অথবা স্বাভাবিক কোন ঘটনাতেও কেউ একজন বলছে আমি ডিপ্রেশনে আছি।তারা মূলত বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মন খারাপ আর ডিপ্রেশন শব্দটাকে একই ব্যাপার হিসেবে ধরে নেয়।

তবে এই দুটি সম্পূর্ণ আলাদা দুইটি ব্যাপার।বলা যেতে পারে মন খারাপ ডিপ্রেশনের প্রাথমিক একটি পর্যায় বা ধাপ কেবল।

বিখ্যাত মনোবিজ্ঞানী অ্যারন বেক-এর তত্ত্ব অনুযায়ী, নিজের, পরিবেশের এবং ভবিষ্যত সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা (নেগেটিভ ভিউ)-র সম্মিলিত প্রকাশই হল ডিপ্রেশন।

অবশ্য, শুধু নেতিবাচক ধারণা থাকলেই চলবে না, রোজকার জীবনে তার প্রভাবও পড়া চাই।অর্থাৎ এই নেতিবাচক ধারণা যদি ক্রমাগতই আপনার স্বাভাবিক জীবনযাপনকে ব্যাহত করতে থাকে তখনই সেটাকে ডিপ্রেশন হিসেবে গণ্য করা যেতে পারে।বই-এর ভাষায় যাকে বলে – ‘Significant Socio-occupational impairment’

অন্যদিকে মন খারাপ আমাদের প্রত্যেকেরই স্বাভাবিক অনুভূতিগুলোর অন্যতম একটি।আমাদের প্রত্যেকেরই কোন না কোন কারণে প্রায়শই মন খারাপ হতে পারে।যেমন বাবা-মা বকা দিলে আমাদের মাঝেমধ্যে মন খারাপ হতে পারে,ফ্রেন্ডের সাথে ঝগড়া হলে মন খারাপ হতে পারে,পছন্দের জিনিস না পেলে,প্রিয় কোন বস্তু নষ্ট হলে মন খারাপ হতে পারে অথবা শরীর খারাপ হলে এমনকি পরিবেশ-প্রকৃতির কারণেও আমাদের মন খারাপ হতে পারে।সুতরাং মন খারাপ হওয়া খুব স্বাভাবিক ব্যাপার।

রিচার্ড ডাইজেস্ট অনুযায়ী ডিপ্রেশনের আটটি লক্ষণ হলো:

১. অনুভূতিগুলো বেশিরভাগ লুকিয়ে রাখা;

২. ভালো বা খারাপ কোনটাই না থাকা;

৩. ইচ্ছে করেই প্রচন্ড ব্যস্ত একটি জীবন বেছে নেওয়া(সবার কাছ থেকে একরকম হারিয়ে যাওয়া);

৪. অল্পতেই রেগে যাওয়া;

৫. অহেতুক ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ করা;

৬. আচরণে অস্পষ্টতা;

৭. নিজের পছন্দের কাজগুলো আর না করা;

৮. এককেন্দ্রিক বা অন্তর্মুখী হয়ে যাওয়া।

যতক্ষণ পর্যন্ত আপনি নিজের মধ্যে আপনি এই লক্ষণগুলোর অন্তত ৫ টি উপলব্ধি করতে না পারছেন ততক্ষণ ধরে নিতেই পারেন আপনি ডিপ্রেশনমুক্ত,তারপরেও যদি মনে হয় আপনার কাউন্সিলিং দরকার সেক্ষেত্রে অবশ্যই কারো সাথে কথা বলুন,মন ভালো রাখার চেষ্টা করুন।

আপনি যদি মনে করেন আপনি ডিপ্রেশনে ভুগছেন সেক্ষেত্রে কী করবেন?

১. নিজেকে আত্মবিশ্বাসী রাখার চেষ্টা করুন,মিনে রাখবেন ডিপ্রেশনের সবচেয়ে বড় টোটকা হচ্ছে নিজের উপর আস্থা রাখা।

২. বাবা-মা,পরিবার,বন্ধু-বান্ধবের সাথে বেশি বেশি কথা বলুন।ইচ্ছে না করলেও এটা করুন।

৩. একা না থাকার চেষ্টা করুন,কারণ একা থাকাবস্থায় সুইসাইডাল চিন্তাভাবনা বেশি আসে মাথায়।

৪. ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানে নিয়মিত অংশগ্রহণের চেষ্টা করুন।ধর্ম-বিশ্বাসী ব্যক্তিদের জন্য এটা অসাধারণ একটা ঔষধ।

৫. পছন্দের কাজগুলো করার চেষ্টা করুন।স্বাভাবিকভাবেই এগুলো আপনার ভালো লাগবে না তবুও করুন।

৬. মাঝমাঝে অবসর নিয়ে নিজেকে সময় দিন।একঘেয়েমি কাটানোর চেষ্টা করুন।

৭. সম্ভব হলে খেলাধুলা,শারীরিক ব্যায়াম এসবে মনযোগ দিন।

৮. এমন কয়েকজন মানুষ খুঁজে বের করুন যাদেরকে মন খুলে সব কথা বলা যায়।আপনি ভালোভাবে খুঁজলেই আপি

নার আশেপাশে কাউকে না কাউকে পেয়ে যাবেন এমন।

৯. সামাজিকতা পালনের চেষ্টা করুন।নিজেকে বদ্ধরুমে আটকে না রেখে বাইরের পৃথিবীর সাথে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করুন।

১০. সর্বোপরি আপনি কী করছেন বা কী করবেন সেটা খুব সচেতনভাবে খেয়াল রাখুন।

এসবের মাধ্যমে কিছুটা হলেও উপকার পাবেন ইনশাআল্লাহ।

সবসময়ই ভাবুন আপনি ভালো আছেন বা ভালো থাকার চেষ্টা করছেন।জীবনে বেঁচে থাকার চেয়ে বড় আর কোন ভালো থাকা নেই। আপনি হয়তো জানেনও না কিন্তু চারপাশের মানুষগুলোর মাঝে অনেকেই আপনাকে অনেক ভালোবাসে,আপনার কথা ভাবে।আপনিও তাদের কথা ভাবুন!

SAY NO TO DEPRESSION!

SAY NO TO SUICIDE!

© Abu Bakar Shaim

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *